Loading...

Saturday, May 30, 2020

সঠিক ডিগ্রী নেই। সোশ্যাল মিডিয়াতে রোষের মুখে সেলেব্রিটি ডায়েটেশিয়ান




তন্নী অপরূপা হতে কে না চায়। কিন্ত যদি 
ওজন বৃদ্ধি হতেই থাকে তাহলে তো সে গুড়ে বালি। তাই নিজের সঠিক চেহারা ধরে রাখতে আমরা দ্বারস্থ হচ্ছি ডাইটিশিয়ানদের কাছে। তবে সেখানেও কিন্ত পরীক্ষা দিতে হচ্ছে ধৈর্যের। কারণ এত তাড়াতাড়ি ওজন কমানো কখনোই সম্ভব না। তার জন্যে দরকার সময়। কিন্তু এতদিন সময় দিতেই অনেকে নারাজ। এখন বেশিরভাগ সময় মানুষ বুঁদ হয়ে থাকে সোশ্যাল মিডিয়াতে। আর এই সোশ্যাল মিডিয়াতেই মাত্র কয়েকদিনের মধ্যেই রোগা করে দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিজ্ঞাপন দেখতে। সেই বিজ্ঞাপনের ভিত্তিতে অপরদিকের মানুষটিকে বিশ্বাস করেই সহজেই ধরা দিয়ে ফেলি আমরা। তবে বিজ্ঞাপন দাতার সঠিক জ্ঞান বা ডিগ্রী রয়েছে কিনা তা কিন্তু অজানাই থাকে। বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে মাত্র কয়েকদিনের মাথায় ওজন কমানো যায় কিনা তাও কিন্তু আমরা ভেবে দেখিনা তন্নী হবার নেশায়।

ঠিক সেইরকমই স্বঘোষিত এক ডায়েটেশিয়ানের বিরূদ্ধে লোক ঠকানোর অভিযোগে ঝড় উঠলো ফেসবুকে। ওই ফেসবুকে একাংশের দাবি যে রুপশ্রী চক্রবর্তী নামক ওই স্বঘোষিত ডায়েটেশিয়ানের আদৌ কোনো সঠিক ডিগ্রি নেই। অথচ কয়েক বছর ধরেই সাধারণ মানুষের পাশাপাশি টলিউডের বহু সেলিব্রেটিও ওনার ক্লায়েন্ট হিসেবে রয়েছেন। 

সোশ্যাল মিডিয়াতে অনেকেই দাবি তুলেছেন যে রুপাশ্রীর আদৌ কোনো নিউট্রিশন বা ডায়েটিং এর ওপর ডিগ্রি বা ডিপ্লোমা নেই। না আছে ওনার সায়েন্স ব্যাকগ্রাউন্ড। তাহলে উনি কিসের ভিত্তিতে এভাবে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ডায়েটের পরামর্শ দিচ্ছেন? এক নিউট্রিশনের ছাত্রী জ্যোতিরময়ী ব্যানার্জী ফেসবুকে সাফ লিখে জানিয়ে দেন রুপশ্রী হাতুড়ে ডায়েটেশিয়ান যিনি কিনা মোটা টাকা নিয়ে মানুষকে বোকা বানাচ্ছেন। উনি মাস ক্যাম্পইন চালিয়ে রুপশ্রী কে ওনার ডিগ্রির বিষয় প্রশ্ন তুললে তিনি মেনেই নেন যে কোনো ডিগ্রি তাঁর নেই। এরপরই অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া থেকে রুপশ্রীর বিরুদ্ধে মুখ খোলেন অনেকে। অনিন্দিতা নন্দন নামে ওনার এক ক্লায়েন্ট জানান ওনার ওই ডায়েট চার্ট ফলো করতে গিয়ে শরীর খারাপ হয়ে গিয়েছে। প্রথমে টাকা ফেরত দেব বললেও পরে আর তা করছেন না। প্রসঙ্গত ডায়েট ফর এভার নামে একটি ফেসবুক পেজের মাধ্যমে ক্লায়েন্টদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন তিনি। এই ঘটনার পর সঙ্গে সঙ্গে তা ডিলিট করে দেওয়া হয়।




তবে ছোট পর্দার অভিনেত্রী অনিন্দিতা রায়চৌধুরী যথেষ্ট খুশি রুপশ্রীর ডায়েট চার্ট পেয়ে। তিনি জানান যে আমি যখন ওর কাছে যাই এক বছর আগে তখন আমার শারীরিক অনেক সমস্যা ছিল। ওর ডায়েট চার্ট মেনে চলে আমি এখন অনেক ভালো আছি। আমার সত্যি কিছু যায় আসেনা যে ওর কাছে কি ধরণের ডিগ্রী আছে। কারণ আমি ভালো ফল পেয়েছি। আমি বাকীদেরটা বলতে পারবনা তবে আমাকে ও কোনোদিন কোনো সাপলিমেন্ট বা ওষুধ নিতে জোর করেনি। আমি যেমন ভাবে খেতে চেয়েছি ও ঠিক সেভাবেই ডায়েট চার্ট দিয়েছে।

এরপরই বং জার্নালের তরফ থেকে রুপশ্রীকে ফোন করলে জানা যায় তিনি অসুস্থ। তাঁর হয়ে কথা বলেন তাঁর ফিয়ান্সে দেবজয় মল্লিক। তিনি মেনে নেন যে নিজের ক্ষেত্রে ডায়েটেশিয়ান শব্দটা রুপশ্রী ব্যাবহার করে ভুল করেছে ঠিকই। কিন্তু তিনি সেই ভুলটা মেনে নেবার আগেই তাঁকে ব্যক্তিগতভাবে হেনস্থা করা হয়েছে। তবে উনি অনলাইনে অবশ্যই এই বিষয়ে নিয়ে ডিপ্লোমা করেছেন। তাহলে উনি তা নিজের প্রোফাইলে দিলেন না কেন। দেবজয় মল্লিকের যুক্তি যেহেতু ওটা একটা ক্র্যাশ কোর্স তাই ওর সেটি দেবার কথা মাথাতেই আসেনি। মেনে নিচ্ছি যে এইভাবে ওর চার্ট করে দেওয়া উচিৎ হয়নি। এখন যদি ওই সার্টিফিকেটগুলি সোশ্যাল মিডিয়াতে দিয়েও দি তাহলেও জানি ট্রোল হবো। কারণ জানি ডায়েটেশিয়ান হওয়া যায়না এতে। তবে মিডিয়া চাইলে সার্টিফিকেট দেখাবো তবে আইনি পরামর্শ নিয়ে। 
 
বং জার্নাল এই বিষয় কথা বলে বিসিসিএল - এর ডায়েটেশিয়ান সঞ্চারি মুখার্জীর সঙ্গে। উনি জানান নিউট্রিশন নিয়ে এক বছরের ডিপ্লোমা তারাই করতে পারে যাদের সায়েন্স ব্যাকগ্রাউন্ড আছে। স্নাকোত্তর এই ডিপ্লোমাটি যদি কেউ করে থাকেন তবে সে নিজেকে ডায়েটেশিয়ান বলতেই পারে। তবে রেজিস্টার ডায়েটেশিয়ান হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতে গেলে IDA থেকে RD পরীক্ষা পাশ করবে হবে। এ ছাড়াও হাসপাতালে যাদের নিয়োগ করা হয়ে তাদের আর ডি না থাকলেও এমএসসি-র পর ডিপ্লোমা অথবা ইন্টার্ন করা থাকে। তবেই কিন্ত তারা ডায়েটেশিয়ান। তবে আর.ডি দিতে হলে আগে পাঁচ বছর হাসপাতালে প্র্যাক্টিস করে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে হবে।
তবে রুপশ্রীর সায়েন্স ব্যাকগ্রাউন্ড নেই এবং যে সার্টিফিকেটগুলি আছে তার আদৌ কোনো রেকগনিশন আছে কিনা তা আগে দেখতে হবে। আর যদি সব ঠিক থেকেই থাকে তবে উচিৎ সেটিকে সামনে আনা।
আমরা সবসময় স্বাস্থ্য সম্মত ডায়েট দেবার চেষ্টা করি। একজন মোটা মানুষকেও দুম করে সব খাবার কমিয়ে দি না। ওনার কিছু কিছু ডায়েট চার্ট সামনে এসেছে। তাতে কিন্তু ব্যালান্স ডায়েট কিছু আছে বলে দেখলাম না। এটা বেশিদিন কেউ মানলে অপুষ্টিতে ভুগবেন। দশ পনেরো দিনে কখনো রোগ হওয়া সম্ভব না। যদি হয়ও থাকেন তবে তার পরিনাম খুব একটা ভালো হবেনা।
      
তাহলে সঠিক জ্ঞান ছাড়া ডায়েট চার্ট অনুসরণ করলে কি ক্ষতি হতে পারে?
নিউট্রিশানিস্ট শরণ‍্যা কুণ্ডু ( Msc in Clinical dietetics) জানান ডায়েট মানেই যে রোগা হতে হবেএ তা নয়। রোগা হতে হলেও তা বিজ্ঞান সম্মতভাবে করতে হয়। কাউকে ডায়েট চার্ট দিতে হলে আগে তার শারীরিক পরিস্থিতি, তার উচ্চতা, লিঙ্গ। এই সমস্ত বিবেচনা করে তবেই দেওয়া হয়। সাধারণ মানুষকেও এই বিষয়ে একটু সচেতন হতে হবে। 



 


 


No comments:

Post a Comment

Thanks for your comment. Feel free to contact for any queries, suggestions or any proposal.

Sponsored AD Space

Sponsored AD Space
See Your AD Here