Monday, May 31, 2021

এক অনামি সাংবাদিকের কথা


এত ঝুঁকিপূর্ণ কাজ কে করতে বলেছে? নিউজ চ্যানেলগুলোর কি আক্কেল বাবা ! জুনিয়র সাংবাদিকদের এভাবে কেউ প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যেই ঠেলে দেয়? পেটের দায়ে বাধ্য হয়ে বেচারাদের ছুটতে হচ্ছে। ইয়াস আছড়ে পড়ার পর থেকেই এই ধরনের উক্তি ঘুরপাক খাচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়াতে। সাধারণ মানুষ, তাদের আর কতটুকুই বা ধারণা এই মিডিয়া হাউসগুলো সম্পর্কে। সত্যি তো। চিকিৎসা জগতের হাল হকিকত না জেনেই আমরা অনেক সময়  চিকিৎসক বা  সাস্থর্মীদের অহেতুক হেনস্থা করে ফেলি। কেই বা আর জনে জনে সাধারণ মানুষকে বোঝাতে যায়।  এই রকম সাত পাঁচ ভেবেই আর কোনো উত্তর দেবার প্রয়োজন মনে করিনি।

কিন্তু চোখ আটকে গেলো  বর্তমানের এক স্বনামধন্য সাহিত্যিকের এই বিষয় কমেন্টস দেখে।  ওনার মতে প্রতিযোগিতায়ে টিকে থাকতে জুনিয়র দের বাধ্য করা হচ্ছে জীবন বিপন্ন করে এই দুর্ভোগ কোনো মাথায় নিয়ে রিপোর্টিং করছে। পুঙ্খানুপুঙ্খ কে জানতে চেয়েছেন? মানুষ হিসেবে আপনার এমন উদ্বেগ প্রকাশ করাটাই স্বাভাবিক। সেই প্রসঙ্গ টেনেই বলছি, সত্যিই কি প্রতিযোগীতা। আমি এক অনামি ক্ষুদ্র সাংবাদিক হিসেবেই বলছি। প্রতিযোগিতা নিশ্চয়ই রয়েছ কিন্তু সেই প্রতিযোগিতায় কোথাও কিন্তু জোর খাটানোর বিষয়ে নেই। এই সংবাদ জগতে পা দেবার সঙ্গে সঙ্গেই কিন্তু গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভের ধ্বজা ওড়াতে আসা সেই ছেলে বা মেয়েটি জেনে যায় যে এই পেশার সঙ্গে কোনোদিন আপোষ করা যায়না। প্রথমে উপভোগ তারপর নেশা হয়ে দাঁড়ায়। 

২০১১ , মনে আছে, তখন আমি নিউজ বাংলা খবরের কাগজে সাংবাদিক হয়ে সদ্য কাজ শুরু করেছি। সারা বছরে মাত্র চারটি পাবলিক হলিডে বরাদ্দ আমাদের প্রিন্ট মিডিয়ার কর্মীদের জন্য। সপ্তাহে একটি করে week off। জুনিয়রদের জন্য সেটিও থাকতনা অনেক সময়। পুজো এলো, যথারীতি কোনো ছুটি নেই আমাদের। আমাদের চিফ রিপোর্টার দায়িত্ব ভাগ করে দিলেন যে কে কোন আঙ্গেল থেকে খবর করবো। আমার দায়িত্ব ছিল কোন পুজোতে কত ভিড় তা জানা এবং জেলাগুলো থেকে পুজোর হালহকিকত। তখন আমরা যারা সদ্য তারুণ্যের সিড়িতে দাঁড়িয়ে রয়েছি তাদের জন্য বন্ধুদের সঙ্গে প্যান্ডেল hopping বা পাড়ার পুজোর জন্য এক আমোঘ টান থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ওই যে বললাম উপভোগ যে কখন নেশায় পরিণত হয়েছে বুঝিনি। অষ্টমীর রাত আটটা তখন। নিউজ বাংলার সম্পাদক অনুপ ধর বলে দিয়েছিলেন যে পুজোর দিনে যেন জুনিয়রদের বিকেল বিকেল ছেড়ে দেওয়া হয়। অবশেষে  আমি, আর এক সহকর্মী শাবানা আর শুভ্র অর্থাৎ এখনকার এই সময়  ও Times of india  সংবাদপত্রের ফটো জার্নালিস্ট শুভ্রদীপ রায় যখন বেশ কয়েকটা  পুজো সম্পর্কিত স্টোরি নিয়ে অফিসে ঢুকলাম তখনই আমাদের Joint editor আমাদের দেখে লাফিয়ে উঠে বললেন  ‘একি এরা এখানে কি করছে। আজ তো পুজো। তোমাদের কি বাড়ি যেতেও ইচ্ছে করছেনা ?’ পাশ থেকে আর এক সিনিয়র রিপোর্টার আমাদের joint editor কে বলে উঠলেন ‘ বুঝছনা কোনো। এই তো ওদের নেশার শুরু”।

কোন গহন অন্ধকারে গিয়ে কোন আলোর সন্ধান পাওয়া যায় এটাই এক সাংবাদিকের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। তা সে যা বলছিলাম। আবার ফিরে যাই সেই লেখিকার কথায়। ওনার লেখার আমি কদর করি। দু একটি বইও পড়ার সুযোগ হয়েছে। কলমে ওনার আগুন রয়েছে। কল্পনা ও বাস্তবের মিশেলে নানান উপন্যাস ও গল্প উনি পাঠকদের উপহার দিয়েছেন। ওনার সঙ্গে ফোনেও দু একবার কথা হয়েছে। Quarantimetv Live চ্যানেলেও উনি আমাদের এক আলোচনা সভার নিমন্ত্রণ গ্রহণ করেছিলেন। সেই সুবাদে জানি যে ওনার লেখাকেও বহুবার কাঠগড়ার সম্মুখীন হতে হয়েছে। জয়ী হয়েছেন সেটাও ঠিক। এরাজ্যে লেখকদের অর্থনৈতিক দিকটা কতখানি চেপে রাখা হয় তাও অনেকের অজানা নয়। সে যাই হোক আমার বলার বিষয়ে হলো উনি নিশ্চয়ই তাতে লেখা ছেড়ে দেননি? বা কারোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায়ে সামিল হতে লিখছেন কি? লেখক বা লেখিকার মানসপট দিয়েই সাধারণ পাঠকরা সামাজিক প্রেক্ষাপটের ছবি দেখতে পান। এবার সাংবাদিকদের নিয়ে ট্রোল বা উদ্বেগ প্রকাশ নিয়ে লেখাটা আমার মূল উদ্দেশ্য নয়। আমি এক অতি সাদামাটা সাংবাদিক। বেশ কিছু সময় এই সাংবাদিকতার জীবনকে সামনাসামনি দেখেছি বা দেখছি। তা থেকেই কিছু টুকরো অভিজ্ঞতাকে তুলে ধরাটাই উদ্দেশ্য। 

মানুষের জানার আধিকার এবং গণমাধ্যমের দ্বারা সঠিক তথ্যের মাধ্যমে সমাজকে সচেতন করার দায়বদ্ধতা থেকেই কিন্তু প্রতিনিয়ত কাজ করছেন সাংবাদিকরা। সাধারণ মানুষের চাওয়া পাওয়া ও আকাঙ্খা নিয়ে সংবাদ পেশ করাটাই একমাত্র কাম্য এই মহান পেশার। সেখানে লক্ষভ্রষ্ট হলে প্রশ্ন উঠবেই। তবুও মানুষ কিন্তু এই গণমাধ্যমেই বিশ্বাসি। 

একটি ঘটনা বলি। ২০১১ সাল। হঠাৎই জানতে পারলাম একটি নামকরা Open University তে কোনো এক ডিপার্টমেন্ট- এর (এখন আর মনে নেই কোন ডিপার্টমেন্ট)  রেজাল্ট আউট নিয়ে ব্যাপক ঝামেলা চলছে। বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। আমি আর পার্থদা অর্থাৎ এখনকার আর এক অতিপিরিচিত লেখক পার্থসারথী গুহ গেলাম সেখানে। দেখলাম বেশ ভিড়। কিছু ছাত্র ভেতরে ঢুকে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে। কিছু পুলিশ বাহিনী রয়েছে। অন্য কয়েকটি চ্যানেলের সাংবাদিকরাও রয়েছেন। আমাদের দেখেই হন্তদন্ত হয়ে এগিয়ে এলেন এক ছাত্র। তার কাছে বিষয় বস্তু শুনে বোঝা গেল গোলমাল করেছে ইউনিভার্সিটির প্রশাসন বিভাগ অথচ তারা ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলতেও নারাজ। এদিকে পুলিশ রয়েছে। সাংবাদিকরাও কোনোভাবে পৌঁছতে পারছেনা প্রশাসনের কাছে। এবার সেই ছাত্রটি হঠাৎই আমার সামনে হাত জোড় করে মিনতি করল। দিদি পারলে আপনারাই পারেন এই বিষয়টি সামনে আনতে। আপনাদের ছাড়া এই সমস্যা আর কাকেই বা বলবো। ব্যাস। এতখানি যখন মানুষ ভরসা করছে তখন তো আর কয়েকটা বাইট নিয়ে ফিরে আসা যায়না।

অবশেষে কয়েকজন ছাত্রদের কথা বলতে ডাকল কতৃপক্ষ। অথচ পুলিশ সাংবাদিকদের আটকাচ্ছে। অথচ আমারও চাই সঠিক খবরটা। তখন বয়েস অল্প হবার কারণে অবশেষে ছাত্রী পরিচয় দিয়ে ঢুকতে পারলাম ভেতরে। পরেরদিন খবরটি বেরোনোর পর ছাত্ররা অফিসে ধন্যবাদ জানিয়ে বললেন। অন্তত এবার কিছুটা সমস্যা মিটবে। পরে অবশ্য এই বিষয়টি নিয়ে অন্য এক সাংবাদিক এগিয়েছিলেন। সাংবাদিকরা সমাজের রূপকার কিনা জানিনা তবে মানুষের স্বার্থে এগিয়ে যেতে কোনো প্রতিযোগিতার প্রয়োজন নেই।

তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সাংবাদিকতার definition বদলেছে। মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিরও বদল ঘটেছে।

                                                          ক্রমশ.........

শ্রীজা ঘোষ সুর



No comments:

Post a Comment

Thanks for your comment. Feel free to contact for any queries, suggestions or any proposal.